॥ শহিদুল ইসলাম হৃদয় ॥
কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারীভাবে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যেও একটি অসাধু চক্র হ্রদের বিভিন্ন ঘোনা এলাকাগুলো অবৈধভাবে দখলে নিয়ে নিয়েছে। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে ঘেরা দিয়ে আবার কিছু কিছু স্থানে পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে লিপ্ত রয়েছে নিজস্ব ব্যবসায়।
এসব চক্রের অনেকেই কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন ঘোনায় অবৈধ জাঁক দেওয়াসহ পানি আটকিয়ে চাষ করছে পিরানহা’র মতো ক্ষতিকর রাক্ষুসে মাছ। প্রভাবশালী মহলের সাথে আঁতাত করে বছরের পর বছর এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে আসায় কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ নানামুখি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ইতিমধ্যেই হ্রদে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এছাড়াও বর্ষায় উজান থেকে আসা তীব্র পানির স্রোতের তোরে অবৈধভাবে দেওয়া অনেকগুলো বাধ ভেঙ্গে গিয়ে চাষকৃত ক্ষতিকর রাক্ষুসে প্রজাতির মাছগুলো কাপ্তাই হ্রদের পানিতে চলে আসে। এতে করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রজাতির মাছগুলো খেয়ে ফেলছে রাক্ষুসে মাছগুলো।
সম্প্রতি জেলার লংগদু উপজেলায় বেশ বড় কয়েকটি পিরানহা মাছ স্থানীয় জেলেদের জ্বালে আটকা পড়ায় বিষয়টি নজরে আসে সংশ্লিষ্ট্য প্রশাসনের। তারই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় জনগণের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ।
ফলশ্রুতিতে বুধবার গোপন সংবাদের মাধ্যমে তথ্যপেয়ে লংগদু উপজেলার করলাছড়ি, কাউয়ামারা বিল, মারিশ্যারচর, মাইনী মুখ, লংগদু গাঁথাছড়া ও তিন ব্রীজের মুখ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ।
সংস্থাটির রাঙামাটির ব্যবস্থাপক নৌ কমান্ডার মোঃ তোহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে নৌ-পুলিশের সহযোগিতায় পরিচালিত এই অভিযানে অন্তত ৮ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়। বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, আমরা অভিযান পরিচালনা করে কয়েক লাখ টাকার মাছের পোনা মূল হ্রদে অবমুক্ত করে দিয়েছি।
এছাড়াও ঘটনাস্থলগুলো থেকে নিষিদ্ধ জাল জব্দ করেছি, যেগুলোর বাজার মূল্য আনুমানিক ১০ লাখ টাকার মতো। খুব শীঘ্রই জালগুলো রাঙামাটিস্থ বিএফডিসি ঘাটে নিলামে তোলা হবে। ব্যবস্থাপক জানান, অভিযানে গিয়ে হ্রদ দখলের মহোৎসব চলছে দেখে বেশ কষ্ট পেয়েছি।
একটি অবৈধ চক্র কাপ্তাই হ্রদ দখল করে মাছের ঘের বানানো পাশাপাশি সরকারীভাবে অবমুক্তকৃত পোনাগুলো বাধ দিয়ে আটকিয়ে ফেলেছে। এই ধরনের কার্যক্রমের ফলে মাছের অবাধ বিচরণ বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য সম্পদের বৃদ্ধির হারও কমে গেছে।
অপকর্মকারিদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কাপ্তাই হ্রদ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন সম্পদ। এই হ্রদের মাধ্যমেই অত্রাঞ্চলের এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠির জীবন-জীবিকা প্রবাহমান। তাই এখনই সময় অবৈধ দখলকারি ও অসাধু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য সম্পদের অস্থিত্বই থাকবে না।